দীর্ঘ তিন বছর পর বুধবার কলকাতায় সর্বসমক্ষে এলেন বিমল গুরুং।এদিন বিকেল ৪ টে নাগাদ গাড়ি করে সল্টলেকের গোর্খা ভবনে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করবার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু গোর্খা ভবন জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার দরজা খোলা হয়নি। কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, গোর্খা ভবনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন না। অবশেষে একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধবার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিমল গুরুং বলেন, ”প্রধানমন্ত্রী হোক বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী- কেউই কমিটমেন্ট রাখেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে কমিটমেন্ট করেছেন, সব পূরণ করেছেন। আজ থেকে এনডিএ ছাড়ছি। ২০২১ সালের নির্বাচনে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোটে লড়াই করব। বিজেপিকে মোক্ষম জবাব দেব।’
মোর্চার প্রধান বিমল গুরুংএর অভিযোগ পাহাড়বাসী ও গোর্খাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বিজেপি বলেছিল তারা দার্জিলিং পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান সূত্র খুঁজে বার করখুঁজে বার করবে। পাশাপাশি ১১টি গোর্খা সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি পুরণে বিজেপি কোনও চেষ্টা করেনি। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন গোর্খাল্যান্ডের দাবি কে এখনও পিছনে সরে আসছেন না তিনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা সেই দলটিকেই সমর্থন করবে যাঁরা গোর্খল্যান্ড ইস্যুতে তাদের পাশে থাকবে।
বিমল গুরুংয়ের ভোলবদলকে কটাক্ষ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন ,”‘বারবার পক্ষ বদল করে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে নিয়ে গিয়েছেন গুরুং। পাহাড়ের পরিশ্রমি শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তিতে বাঁচতে চান। সেজন্য সিপিএম সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যে সর্বোচ স্বায়ত্বশাসনে বিশ্বাস করে।”
গুরুং এর মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,”পাহাড় ছাড়া ছিলেন দীর্ঘ দিন । পাহাড়ে ফিরতে চেয়েছিলেন, তাই আত্মসমর্পণ করলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে আত্মসমর্পণ করলে সব কিছুতেই ছাড় মেলে। বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছত্রধর মাহাতো। এখন দেখার বিমল গুরুংদের বিরুদ্ধে মামলার কী হয়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে আত্মসমর্পণ করলে সব কিছুই ছাড় । এ এক রাজ্য চলছে বটে!”
তার বিরুদ্ধে চলা মামলা গুলি নিয়ে গুরুং কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ,’আমি দুষ্কৃতী বা দেশদ্রোহী নই। আমি একজন রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক আন্দোলন করতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবেই তার সমাধান করবো।”জানা গেছে পুলিশের খাতায় ফেরার হলেও তাঁর দাবি, গত তিন বছর তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। গত দু’মাস ছিলেন ঝাড়খণ্ডে।
সূত্রের খবর, ৩ মাস আগে থেকে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তৃণমূলের। মাঝে দিল্লিতে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠকও হয় তাঁর। তারপরও একাধিকবার কথা হয়েছে। শিলিগুড়িতে প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হয় বিমল গুরংয়ের প্রতিনিধিদের। গত ১ মাস ধরে গুরুংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। আসানসোলের ওই নেতার সঙ্গে ঝাড়খন্ডে বৈঠক হয়েছে বিমল গুরুংয়ের।বুধবার দুপুরে রাজভবনে ওই মন্ত্রীর একটি কোয়ার্টারে যান বিমল গুরং। সেখানে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত হয় সাংবাদিক বৈঠক করবেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা।
গুরুং এর এই সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, তৃণমূলের সঙ্গে কী রফা হল বিমল গুরুংয়ের? সাংবাদিক বৈঠকে তো বারবার গোর্খাল্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাহলে কি গুরুংয়ের দাবি মেনে নিয়েছে তৃণমূল? বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে তৃণমূলকে।